ইলিয়াড [Iliad] হচ্ছে গ্রিক মহাকাব্য। প্রাচীন গ্রিসের ইলিওন [Ilion] শহরের নামানুসারে এই মহাকাব্যের নামকরণ করা হয়। মহাকবি হোমার [Homer] এই মহাকাব্যের রচয়িতা। এটি গ্রিক ভাষায় রচিত ও ২৪ টি সর্গে বিভক্ত। এর বিষয় ট্রয়ের যুদ্ধ। এতে ১৬,০০০ পঙ্‌ক্তি কবিতা আছে। যুদ্ধ সংঘটিত হয় এক নারীকে কেন্দ্র করে যার নাম হেলেন যুদ্ধে গ্রীকদের সেরা বীর ছিল অ্যাকিলিস আর ট্রয় পক্ষের ছিল হেক্টর যুদ্ধ যখন শেষ পর্যায় তখন হেক্টর অ্যাকিলিস কর্তৃক নিহত হন এবং এর মাধ্যমে মূলত ট্রয়বাসীর পরাজয় নিশ্চিত হয়। যুদ্ধ শেষে গ্রিক সেনারা সুরক্ষিত ও সাজানো নগরী ট্রয় জ্বালিয়ে দেয়।
ইলিয়াড কাব্যের পরবর্তী খণ্ড হিসেবে ওডিসির উল্লেখ করা হয়। এটিও হোমারের রচনা বলে ধারণা করা হয়। এই দুটি কাব্য পশ্চিমা সাহিত্যের সবচেয়ে পুরাতন রচনা হিসেবে গণ্য এবং এর লিখিত রূপ খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর বলে ধারণা করা হয়। আধুনিক গ্রহণযোগ্য সংস্করণে ইলিয়াডের ১৫,৬৯৩টি ছত্র রয়েছে। এটি আইওনিক গ্রিক ও অন্যান্য উপভাষার সংমিশ্রণে গঠিত হোমারীয় গ্রিক ভাষায় রচিত। মাইকেল এন ন্যাগলারের মতে, ইলিয়াড ওডিসির থেকেও জটিলতর মহাকাব্য।
Iliad summary in bangla with characters
Iliad summary in bangla with characters


Iliad Characters in Bangla:


গ্রিক বাহিনীর চরিত্রগুলোঃ

  • Achaeans: আচিয়ান শিবিরের বন্দী মহিলাদের সহ হোমার গ্রীকদের "আচিয়ানস" বলে ডাকেন। তাদেরকে আর্গিভস [Argives], ডানানস [Danaans] এবং থেসালিয়ান [Thessalians] হিসাবেও অভিহিত করা হয়।
  • Achilles: অ্যাকিলিস, ফিথিয়ার রাজপুত্র। সে হচ্ছে ইলিয়াড মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তার ক্রোধ নিয়ে আলোচনা বা ডিল করা হলো মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় একশন। মর্তের রাজা পেলেউস [peleus] ও সাগরদেবী থেটিসের [thetis] পুত্র, বীর যোদ্ধা এবং মিরমিডন [Myrmidon] জাতির নেতা।
  • Patroclus: প্যাট্রোক্লাস, আকিলিসের ঘনিষ্ঠ সহচর। একিলিস এবং প্যাট্রোক্লাস বাল্যকাল থেকেই অবিচ্ছেদ্য। প্যাট্রোক্লাস দয়াময় পাশাপাশি ভয়ঙ্করও, যখন অ্যাকিলিস লড়াই করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন প্যাট্রোক্লাসই তাঁর সহচরদের নির্দিষ্ট মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি হেক্টর দ্বারা নিহত হন এবং তার মৃত্যু অ্যাকিলিসকে যুদ্ধে ফিরিয়ে আনে।
  • Briseis: ব্রিসেইস ব্রিসিউসের [Briseus] কন্যা এবং আচিয়ান শিবিরের বন্দী মহিলা। বীরত্বের জন্য পুরষ্কার হিসাবে অচিলিসকে ঐ মহিলা দেওয়া হয়। আগামেমনন এই উপহারটি প্রত্যাহার করে নিলে, অ্যাকিলিসের সম্মানের অপমান তাঁর (একিলিস) ক্রোধের কারণ এবং তাদের মধ্যকার দ্বন্ধ শুরু হয়।
  • Agamemnon: আগামেমনন, মাইসিনির [Mycenae] রাজা ও গ্রিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং অ্যাট্রিউসের পুত্র, মেনেলাউসের ভাই ও ক্লাইটেমনেস্ট্রার স্বামী। তিনি মাঝে মাঝে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং কোনো সময়ে তিনি একগুঁয়ে এবং অস্বাভাবিকভাবে একজন গর্বিত মানুষ। অ্যাকিলিসের সম্মানের প্রতি তাঁর অবমাননা হচ্ছে একটি জুলুম বা অত্যাচার। এবং তিনি কখনও নিজেকে অ্যাকিলিসের কাছে সত্যিকারের ক্ষমা চাইতে সক্ষম হননি যা মহান যোদ্ধাকে যুদ্ধে ফিরিয়ে আনতে পারত। তাঁর সিদ্ধান্তহীনতার আক্রমণগুলি বোঝায় যে, তিনি শাসক হিসাবে তাঁর ভূমিকা কতটা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন।
  • Nestor: নেলিয়ানদের রাজা। নিলিয়াসের [neleus[ ছেলে। নেস্টার আচিয়ান রাজাদের মধ্যে প্রাচীনতম। তিনি এখনও সাহসী এবং আশ্চর্যরকম শক্তিশালী, তবে যুদ্ধের ক্ষেত্রে তার সেরা দিনগুলি তার পিছনে রয়েছে। তিনি আগামেমননের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদাতা। তিনি তার যৌবনের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে প্রায়শই দীর্ঘ গল্পগুলি বলেন।
  • Chryseis: সে Chryses এর কন্যা এবং আগামেমননের বন্দী। আগামেমনন তার বাবার মুক্তিপণ [ransom] প্রত্যাখ্যান করলে, অ্যাপোলো আচিয়ানদের উপর প্লেগ নিয়ে আসে।   
  • Calchas: থেস্টরের পুত্র। তিনি মহান নবী। তিনি বুক-একে প্লেগের কারণটি সঠিকভাবে নির্ণয় করেছেন।
  • Odysseus: অডিসিউস ইথাকার রাজা এবং অ্যাথেনার প্রেমিক। ওডিসিয়াস একজন বুদ্ধিমান পরামর্শদাতা [counselor] এবং দক্ষ কূটনীতিক [diplomat]. তিনি চালাক ও অনুগত এবং অ্যাগামেমননের সমর্থক। যুদ্ধে সেনাপ্রধান পথহারা হয়ে গেলে তিনি অনুপ্রাণিত করেন।
  • Great Ajax: গ্রেট অ্যাজাক্স টেলামানের পুত্র এবং সালামিস যোদ্ধাদের নেতা এবং গ্রেট আজাক্স হলো ভাল সৈনিকের মূর্ত প্রতীক এবং আচিয়ান যোদ্ধাদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বৃহত্তম যোদ্ধা। যদিও তিনি অ্যাকিলিস, হেক্টর এবং ডায়োমেডিসের মতো পুরো সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে পারেন না, তবুও তিনি অগ্রসরমান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেন প্রায় দুর্গম প্রাচীর। শত্রুদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া তাঁর বিশেষত্ব।
  • Little Ajax: লিটল অ্যাজাক্স অলিয়াসের পুত্র ও লুক্রিসদের নেতা। লিটল আজাক্স তার নিজের অধিকারে দুর্দান্ত যোদ্ধা। কঠোর চাপযুক্ত সহযোগীরা ডাক দিলে তিনি দ্রুত ছুটে আসেন। তিনি এবং গ্রেট আজাক্স, একটি দল হিসাবে একসাথে ভাল কাজ করেন। যখন তাকে এবং গ্রেট আজাক্সকে একটি জুটি হিসাবে উল্লেখ করা হয়, তাদের এয়ান্টস [aeantes] বলা হয়।
  • Menelaus: মেনেলাউস স্পার্টার রাজা, আগামেমননের ভাই ও হেলেনের স্বামী। প্রায়শই তার ভাইয়ের ছায়ায় মেনেলাউস একজন শক্তিশালী যোদ্ধা এবং অনেক সময় কার্যকর নেতা ছিলেন। তার স্ত্রী হেলেনকে অপহরণ [abduction] করা ট্রোজান যুদ্ধের কারণ।
  • Diomedes: ডায়োমিডাস টাইডিউস [Tydeus] এর পুত্র ও আর্গসের রাজপুত্র। বুক-ফাইভে এথেনার দ্বারা তাঁকে প্রচুর শক্তি দেওয়া হয়েছে, এবং অসংখ্য ট্রোজানকে হত্যা করেছিলেন। তিনি বুক-10 এ রাতে অভিযানের সময় তিনি ওডিসিউসের সাথেও ছিলেন।


ট্রয়ের চরিত্রগুলো হলঃ

  • Hector: হেক্টর রাজা প্রায়াম ও রানী হেকুবার পুত্র এবং ট্রয় বাহিনীর প্রধান যোদ্ধা ও সেনাপতি।
  • Andromache: অ্যান্ড্রোমাকি হেক্টরের স্ত্রী ও এস্টিয়ানাক্সের মাতা।
  • Priam: প্রায়াম ট্রয়ের রাজা। হেক্টর ও প্যারিস সহ প্রায়াম হচ্ছে ৫০ ট্রজান যুদ্ধাদের পিতা।
  • Hecuba: হেকুবা রাজা প্রায়ামের স্ত্রী, হেক্টর, ক্যাসান্ড্রা, প্যারিস, হেলেনাস ও ডেইফোবাসের মাতা।
  • Cassandra: ক্যাসান্ড্রা প্রায়াম ও হেকুবার কন্যা, হেক্টর ও প্যারিসের বোন।
  • Deiphobus: ডেইফোবাস হেক্টর ও প্যারিসের ভাই।
  • Paris: প্যারিস 'Alexander' নামেও পরিচিত। সে রাজা প্রায়াম ও রানী হেকুবার পুত্র, ট্রয়ের যুবরাজ এবং হেলেনের প্রেমিক ও অপহরণকারী।
  • Helen: হেলেন জিউসের কন্যা, মেনেলাউসের স্ত্রী, এবং প্যারিস কর্তৃক অপহৃত।
  • Aeneas: ইনিয়াস দেবী আফ্রোদিতি ও অ্যাঙ্কাউসিজের পুত্র এবং হেক্টরের চাচাতো ভাই।
  • Polydamas: পলিডেমাস ট্রয়ের একজন কৌশলী ও চিন্তাশীল যুদ্ধবিশারদ।
  • Sarpedon: সার্পেডন দেবরাজ জিউসের পুত্র, লাইসিয়াম দলের অধিনায়ক, প্যাট্রোক্লাসের হাতে নিহত হন।
  • Glaucas: গ্লকাস হিপোলোকাসের পুত্র, সার্পেডনের বন্ধু ও লাইসিয়াম দলের সার্পেডনের পরেই তার স্থান।
  • Dolon: ডোলন ধনাঢ্য ট্রয় যুবক ও গ্রিক ক্যাম্পে গোয়েন্দা।
  • Antenor: এন্টিনর রাজা প্রায়ামের উপদেষ্টা, যিনি হেলেনকে ফিরিয়ে দেওয়ার উপদেশ দেন।
  • Agenor: এজনর এন্টিনরের পুত্র ও ট্রয় যোদ্ধা, যে আকিলিসের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিল।
  • Pandarus: প্যান্ডারাস লাইকাওনের পুত্র ও প্রখ্যাত তীরন্দাজ কিন্তু বিশ্বাসঘাতক।


প্রধান দেবদেবী:
  • Zeus: জিউস দেবতাদের রাজা। মর্ত ও ভূমণ্ডলের অধিপতি। নির্দলীয়।
  • Hera: হেরা দেবরাজ জিউসের স্ত্রী ও গ্রিক পুরাণের স্বর্গের রানী। তিনি গ্রিক বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Athena: অ্যাথিনা জ্ঞান বিজ্ঞান, যুদ্ধ ও চারুকলার দেবী এবং জিউসের কন্যা। তিনি তার মায়ের মত গ্রিক বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Artemis: আর্তেমিস অরণ্যচারী [hunt] দেবী এবং দেবরাজ জিউসের কন্যা। তিনি ট্রয় বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Apollo: অ্যাপোলো ভবিষ্যদ্বণী ও সঙ্গীতের দেবতা দেবরাজ জিউসের পুত্র। তিনি ট্রয় বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Aphrodite: আফ্রোদিতি প্রেমের দেবী এবং জিউসের কন্যা। তিনি ট্রয় বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Hephaestus: হেফাইস্তোস দেব কারিগর ও অগ্নিদেবতা এবং আফ্রোদিতির স্বামী। তিনি গ্রিক বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Ares: আরেস দেবী আফ্রোদিতির প্রেমিক এবং যুদ্ধের দেবতা। তিনি প্রথমে গ্রিক ও পরে ট্রয় বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Poseidon: পসেইডন সমুদ্র দেবতা। তিনি গ্রিক বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Hermes: হার্মিস দেবতাদের সংবাদ বহনকারী। তিনি প্রথমে নির্দলীয় ও পরে ট্রয় বাহিনীর সমর্থন করেন।
  • Thetis: থেতিস পাতালপুরীর দেবতা। নির্দলীয়।
  • Iris: আইরিস দেবরাজ জিউসের বার্তাবাহক।


Iliad Summary in Bangla:


Introduction:

রাজা জিউস গ্রীকদের স্বর্গের দেবতা। একদিন এক ভোজসভায় সমস্ত দেব-দেবীকে তিনি নিমন্ত্রন করলেন কিন্তু একজন কে ব্যতীত। তিনি হচ্ছেন অশান্তির দেবী। অশান্তির দেবী খুন্ন হলেন। তিনি আড়াল থেকে দেবতাদের সভায় একটি সোনার আপেল ফেলে দিলেন, আর আপেলটির গাঁয়ে লিখে দিলেন ‘এ আপেলটি তার জন্য যে সবার চেয়ে সুন্দরী‘

এখন দেবীদের মধ্যে ছিলেন তিনজন ছিলেন পরমা সুন্দরী। যথা- হীরা, অ্যাথিনি আর আফ্রোদিতি। তিনজন-ই দাবি করলেন আপেলটি। শেষে যখন নিজেদের মধ্যে মিমাংসা হল না, তখন তারা নেমে এলেন পৃথিবীতে। ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস পরম সুন্দর পুরুষ বলে তার অসম্ভব খ্যাতি। এবং তিনি পাহাড়ের উপর বসে পিতার মেষ পাহারা দিচ্ছিলেন। তখন ঐ তিন দেবী এসে বিচারের ভার তার উপর দিলেন।


কিন্তু সেই সঙ্গে তিনজন-ই নানা রকম লোভ দেখাতে ছারলেন না। হীরা দেবরাজ জিউস এর পত্নী, তিনি লোভ দেখালেন ক্ষমতার। অ্যাথিনি লোভ দেখালেন জ্ঞান ও বিদ্যার। আর অ্যাফ্রদিতি লোভ দেখালেন ভালবাসার। এবং বললেন, ক্ষমতা আর বিদ্যা দিয়ে কি হবে প্যারিস, আমাকে যদি তুমি সবচেয়ে সেরা সুন্দরী মেনে নিয়ে আপেলটি দাও তা হলে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দেব। প্যারিস আর দ্বিরুক্তি না করে অ্যাফ্রদিতি কেই 
আপেলটি দিয়ে দিলো। 


ফলে আফ্রদিতি যেমন তার উপর খুশি হলেন তেমনি বাকি দুজন তার উপর ভীষণ রেগে গেলো। তারা ঠিক করলেন প্যারিসকে এর শাস্তি দিতে হবে। মেনেলাস হলেন গ্রীস দেশে স্পার্টা রাজ্যের রাজা। তার স্ত্রী হেলেন ছিল তখন পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। অ্যাফ্রদিতি এর চক্রান্তে প্যারিস স্পার্টা রাজ্যের অতিথি হলেন। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে হেলেন কে নিজের দেশ ট্রয় নগরিতে পালিয়ে নিয়ে এলেন।


কিন্তু গ্রীকরা এ অপমান সহ্য করতে রাজি হল না। মেনেলাসের দাদা আগামেমনন গ্রীসের সম্রাট ছিলেন। তিনি গ্রীসের সমস্ত রাজাদের একত্র করলেন। এবং পরবর্তীতে গ্রীকরা সদলবলে ট্রয় আক্রমন করলো এবং প্রাচীর ঘেরা শহর অবরোধ করে রাখল। শুরু হল যুদ্ধ। বিখ্যাত ট্রয় যুদ্ধ। এই নিয়েই লেখা হোমারের ইলিয়াড কাব্য। ইলিয়াম ট্রয় এর আরেক নাম। ট্রয় এর অধিবাসী দের ট্রোজান বলা হত। তারপর দশ বছর ধরে চলল যুদ্ধ।




Summary:


ট্রোজান যুদ্ধ শুরুর নয় বছর পরে গ্রীক (আচিয়ান) সেনাবাহিনী ট্রয়ের একটি শহর Chryse কে ধ্বংসযজ্ঞ বা লুন্ঠন করেছিল। যুদ্ধের সময় আচিয়ানরা একজোড়া সুন্দরী মেইডেনস, ক্রাইসেইস এবং ব্রিসেইস কে বন্দী করে। মূলত 
গ্রীক বীর একিলিসের ক্রোধের ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমেই ইলিয়াড মহাকাব্যের সুচনা হয়েছে। গ্রিক বীর আগামেমনন ও একিলিসের মাঝে নারীঘটিত বিবাদের কারনে একাদশ বর্ষে গ্রিক শিবিরে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। তা এই কারনে যে, আচিয়ান বাহিনীর নেতা আগামেমনন ক্রাইসেইস কে তার পুরষ্কার হিসাবে গ্রহণ করেন এবং আচিয়ানদের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অ্যা্লিকিস ব্রিসেইস কে দাবি করেন। ক্রাইসেইস এর বাবা ক্রাইসেস, যিনি অ্যাপোলো দেবতার পুরোহিত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁর মেয়ের বিনিময়ে প্রচুর মুক্তিপণ প্রদান করেছিলেন, কিন্তু আগামেমনন ক্রাইসেইসকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেছিল। এরপরে ক্রাইসেস অ্যাপোলোর কাছে প্রার্থনা করেন, তিনি আচিয়ান শিবিরের উপরে প্লেগ পাঠান।

বহু আচিয়ান মারা যাওয়ার পরে, আগামেমনন প্লেগের কারণ নির্ধারণের জন্য ভবিষ্যদ্বক্তা Calchas এর সাথে পরামর্শ করেছিলেন। যখন তিনি জানতে পেরেছেন ক্রাইসেইস-ই এই প্লেগের কারণ, তখন তিনি অনিচ্ছায় তাকে ছেড়ে দেন তবে ক্ষতিপূরণ হিসাবে অ্যাকিলিসের কাছ থেকে ব্রিসেইসকে দাবি করেন। এই অপমানে ক্রুদ্ধ হয়ে অ্যাকিলিস সেনা শিবিরে ফিরে আসে এবং আর কোনো যুদ্ধে লড়াই করতে অস্বীকার করে। তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ ভাবে আচিয়ানদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া চেয়েছিলেন এবং তাঁর মা, সমুদ্র দেবী থেটিস কে, এই লক্ষ্যে দেবতাদের রাজা জিউসের সাহায্য নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। ট্রোজান এবং আচিয়ান পক্ষদ্বয় একে অপরের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে, কিন্তু ট্রোজানরা এই চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং জিউস তাদের সহায়তা করার জন্য আসে।

জিউস যুদ্ধকে অস্বীকার করে ট্রোজান ও অ্যাকিলিসকে সমর্থন করলে আচিয়ানরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। প্যারিস ও মেনেলাউস এবং হেক্টর ও অ্যাজাক্সের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সহ বেশ কয়েক দিনের ভয়ঙ্কর দ্বন্দ্ব হয়। আচিয়ান রা কোনও উন্নতি লাভ করতে পারে না। এদিকে মহান আচিয়ান যোদ্ধা ডায়োমেডেস ট্রয়পক্ষ এর সহায়তাকারী দেবী আফ্রোদিতি ও যুদ্ধদেবতা আ্যারেস কে আহত করে অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিলেও, শেষ পর্যন্ত  তার বীরত্বও নিরর্থক প্রমাণিত হয়। ট্রোজানরা আচিয়ানদের পিছনে ঠেলে দেয় (push away) এবং তাদেরকে প্রাচীর বা কেল্লার (ramparts) পিছনে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। যখন ডায়োমেডিস ও ওডিসিয়াসের একটি নাইট গোয়েন্দা মিশন ট্রোজানদের পরিকল্পনা সম্বন্ধ্যে তথ্য প্রদান করে, তখন আচিয়ানরা ভবিষ্যতের জন্য কিছু স্বস্তির আশা পোষণ করতে শুরু করে।

কিন্তু পরের দি্ন বিপর্যয় নেমে আসে। ট্রয়বীর হেক্টর প্রচণ্ড গতিতে এগোতে লাগলেন গ্রিক শিবির লক্ষ্য করে। তার অন্যতম উদ্দেশ্য গ্রিকদের জাহাজগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়া। দুই পক্ষের ঘোরতর যুদ্ধে গ্রিক পক্ষে আগামেমনন, ডায়োমিডাস, অডিসিউস প্রমুখ এসব বীর আহত হয়ে শিবিরে অবস্থান করতে লাগলেন আর এ সুযোগে ট্রয়বাহিনী এগিয়ে এল গ্রিক জাহাজের কাছে এবং গ্রীক জাহাজে উঠে পড়ল অনেকেই। বেশ কয়েকজন আচিয়ান কমান্ডার আহত হয়ে পড়ে এবং ট্রোজানরা আচিয়ান দের কেল্লা বা প্রাচীর ভেঙে দেয়। তারা আচিয়ান শিবিরের সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে যায় এবং একটি জাহাজে আগুন দেয়। পরাজয়টি অনিবার্য বলে মনে হচ্ছে, কারণ জাহাজগুলি না থাকলে সেনাবাহিনী ট্রয়-তে আটকে থাকবে (stranded) এবং প্রায় ধ্বংস হয়ে যাবে। এদিকে অলিম্পাস পর্বতের দেবতারা দুই পক্ষে ভাগ হয়ে দু’দলকেই সমর্থন দিতে লাগলেন। দেবরাজ জিউস প্রথম দিকে ট্রয়পক্ষ অবলম্বন করলেও শেষে নিষ্ক্রিয় হয়ে যুদ্ধ অবলোকন করতে লাগলেন।

গ্রীকরা যখন ট্রয়বাহিনীর হাতে রীতিমতো পর্যুদস্ত তখন তারা বাধ্য হয়ে উপঢৌকনসহ চলে গেলেন একিলিস এর জাহাজে আগামেমননের অনুরোধ নিয়ে। একিলিস তাঁর সাথীদের জন্য উদ্বিগ্ন তবে তিনি নিজে তাদেরকে সাহায্য করতে পেরে খুব গর্বিত। অ্যাকিলিস নেস্টার এর প্রস্তাবিত এক পরিকল্পনার সাথে সম্মত হন এবং তিনি নিজে না এসে তাঁর বর্মটা সহ তার বন্ধু ও সহযোদ্ধা প্যাট্রোক্লাস কে পাঠালেন। প্যাট্রোক্লাস একটি দুর্দান্ত যোদ্ধা, এবং যুদ্ধের ময়দানে তার উপস্থিতিতে আচিয়ানরা ট্রোজানদের জাহাজ থেকে দূরে ঠেলতে এবং শহরের দেয়াল বা প্রাচীরের পিছনে নেওয়াতে সহায়তা করে। তবে পাল্টা আক্রমণ শীঘ্রই বিভ্রান্ত হয় এবং যুদ্ধে প্যাট্রোক্লাস বহু ট্রয় সেনা নিহত করে।


অ্যাপোলো প্যাট্রোক্লাসের বর্মটি মাটিতে ফেলে দেয় এবং হেক্টর তাকে মেরে ফেলেছিল। উভয় পক্ষে প্যাট্রোক্লাসের বডি এবং বর্মের দাবি দাবি করে এবং তা নিয়ে আবার লড়াই শুরু হয়। হেক্টর বর্মটি ধ্বংস করে দেয়। তবে আচিয়ানরা মেনেলাউস এবং অন্যান্যদের সাহসী প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানায়। যখন অ্যাকিলিস জানতে পেরেছিল যে হেক্টর প্যাট্রোক্লাসকে হত্যা করেছে, তখন তিনি এমন শোক ও ক্রোধান্বিত হন যে তিনি আগামেমননের সাথে পুনর্মিলন করতে এবং যুদ্ধে যোগ দিতে সম্মত হন। থেটিস অলিম্পস মাউন্টে গিয়ে হেফাইস্তোস দেবতা কে অ্যাকিলিসের জন্য নতুন বর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে, যা পরের দিন সকালে তিনি তাকে উপহার দিয়েছিলেন। অ্যাকিলিস পরে আছিয়ান সেনাবাহিনীর প্রধানের দিকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা (ride) হয়।

এদিকে, হেক্টর, অ্যাকিলিসের যুদ্ধে পুনরায় যোগদানের প্রত্যাশা না করে, তার লোকদের কে ট্রয়ের দেওয়ালের বাইরে শিবির স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে ছিল। কিন্তু ট্রোজান আর্মি যখন অ্যাকিলিসের ঝলক দেখে , তখন তারা শহরে দেয়ালের পিছনে ভয়ে পালিয়ে যায়। অ্যাকিলিস যতজন ট্রোজানকে দেখেছে ততজনকে হত্যা করে। তাঁর ক্রোধ দ্বারা শক্তিশালী হয়ে তিনি এমনকি জানথাস (xanthus) নদীর দেবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, যিনি রেগে গিয়েছিলেন এ কারনে যে একিলি্সের জন্য এতগুলি মৃতদেহ তার নদীতে পড়েছে।

অবশেষে, অ্যাকিলিস ট্রয়ের দেয়ালের বাইরে হেক্টরের মুখোমুখি (confront) হন। হেক্টর তার সাথীদের যে বাজে পরামর্শ দিয়েছেন তাতে লজ্জা পেয়ে তিনি তাদের সাথে শহরের ভিতরে পালাতে অস্বীকার করেছিলেন। অ্যাকিলিস তিনবার তাকে শহরের চারপাশে তাড়া করে, কিন্তু দেবী অ্যাথেনা অবশেষে হেক্টরকে অ্যা্কিলিসের দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর এবং লড়াই করার জন্য চালিত করেন। বহুদূর পর্যন্ত তাড়া করে জ্যানথাস নদীর মোহনায় এসে পাকড়াও করলেন। নাটকীয় দ্বন্দ্বের মধ্যে, অ্যাকিলিস হেক্টরকে হত্যা করেছিল। তারপরে তিনি দেহটি তার রথের পিছনে দড়ি দিয়ে বাধেন (lash) এবং যুদ্ধক্ষেত্র পেরিয়ে আছিয়ান শিবিরে টেনে-হেচড়ে নিয়ে যান (drag) এবং ট্রয়বাসী শুধু অসহায়ের মতো এটা প্রত্যক্ষ করল।

অ্যাকিলিসের আগমনের পরে, বিজয়ী আচিয়ানরা তাঁর সম্মানে অ্যাথলেটিক সিরিজের দীর্ঘ খেলার সাথে প্যাট্রোক্লাসের শেষকৃত্যটি উদযাপন করে। পরের নয় দিনের প্রতিটি দিন, অ্যাকিলিস হেক্টরের দেহটিকে প্যাট্রোক্লাসের ফিউনারাল বিয়ারের আশেপাশে চক্রাকারে টানা-হেচড়া করে।


শেষ পর্যন্ত, দেবতারা সম্মত হন যে হেক্টর যথাযথ দাফনের দাবিদার। জিউস হার্মিস দেবতা কে হেক্টরের বাবা এবং ট্রয়ের শাসক কিং প্রিয়াম এর প্রহরীস্বরুপ আছিয়ান শিবিরে পাঠিয়েছিলেন। প্রায়াম অশ্রুসিক্তভাবে অ্যাকিলিসের কাছে তার ছেলের প্রতি শোক প্রকাশের জন্য মাতম হওয়ার জন্য এবং হেক্টরের দেহ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি অ্যাকিলিসের নিজের বাবা পেলিয়াস এর স্মৃতি প্রার্থনা করেন। গভীরভাবে বিচলিত হয়ে, অ্যাকিলিস অবশেষে নরম বা দয়াদ্র হয় (relent) এবং হেক্টরের মৃতদেহ ট্রোজানদের কাছে ফিরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি (truce) তে সম্মত হয় এবং হেক্টর একজন নায়কের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া গ্রহণ করে। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে ইলিয়াড মহাকাব্যের।



সামারি বা আর্টিকেলটি পড়ে কেমন লাগলো, তা কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই জানাতে পারেন। এতে করে আমি উতসাহ পাবো।

2 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post